গল্প উপন্যাসে আর সিনেমায় কত শত নিত্যনতুন চরিত্রের দেখা মেলে। তাদের একটা বড় অংশই হারিয়ে যায় কালের গর্ভে। কিন্তু কিছু চরিত্র তাদের অনন্যতা, অসাধারণত্ব, মেধা, সৌন্দর্য আর ব্যক্তিগত কমনীয়তার জোরে মানুষের হৃদয়ে টিকে থাকে যুগের পর যুগ। সেসব চরিত্র কখনো আসে কল্পকাহিনী আর পুরাণ থেকে, কখনো বা আসে গল্প উপন্যাস আর কমিক থেকে।গল্প-উপন্যাসের চরিত্র যখন জনপ্রিয়তা লাভ করে, তখন তাকে নিয়ে নির্মিত হয় সিনেমা। সেসব সিনেমার মাঝেও কিছু সিনেমা আবার অমর হয়ে থাকে বইয়ের পাতার চরিত্রের যথার্থ চিত্রায়নের জন্য। এরকম কিছু কাল্পনিক চরিত্র নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা
ব্রুস ওয়েইন

“সবকিছুই অসম্ভব, যতক্ষণ না কেউ তা করে দেখায়!”- ব্রুস ওয়েইন
১৯৩৯ বিল ফিঙ্গারের লেখা গল্পের চরিত্র ব্রুস ওয়েইনকে ব্যাটম্যান রূপে চিত্রায়িত করেছিলেন কার্টুনিস্ট বব কেইন। সেবছর ডিসি কমিক্সের একটি গোয়েন্দা পর্বে ব্যাটম্যান হাজির হয়েছিলেন। তারপর থেকে তিনি যেন বাস্তব চরিত্রে রূপ নিয়েছেন। ১৯৪৩ সালে প্রথম ‘ব্যাটম্যান’ সিনেমা মুক্তির পর থেকে এখনো পর্যন্ত মোট ১৩টি ছবিতে নিজের শহরকে বাঁচানোর লড়াই করেছেন ব্যাটম্যান। মাঝে হয়ে গেছে অনেকগুলো টেলিভিশন সিরিজ আর অ্যানিমেশন ছবিও। আর এসবের মধ্য দিয়ে ব্যাটম্যান হয়ে উঠেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্রগুলোর একটি।
শার্লক হোমস

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা কে? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রায় শতভাগ মানুষই সিআইএ, মোসাদ, এমআই ফাইভ, কেজিবির মতো কোনো গোয়েন্দা সংস্থার কোনো তুখোড় গোয়েন্দার নাম স্মরণ করার চেষ্টা করবেন না। বরং নির্দ্বিধায়, বিনা বাক্যব্যয়ে বলে দেবেন ‘শার্লক হোমস’। এর সাথে অমত হবারও কি কোনো উপায় আছে? অথচ শার্লক হোমস চরিত্রটিই কি না কাল্পনিক! তবে অন্য যুক্তিতে যদিও বলা যায় যে, শার্লক হোমসের স্যার আর্থার কোনান ডয়েলই আসলে শার্লক হোমস। তথাপি, ডয়েলের কথা আর কজন দর্শক/পাঠক ভাবেন? তার চেয়ে বরং কাল্পনিক চরিত্র শার্লক হোমসকে বইয়ের পাতায় আর টিভি পর্দায় দেখে দেখে তাকেই বাস্তবে স্থান দিয়েছে মানুষ।
‘আ স্টাডি ইন স্কার্লেট’ দিয়ে ১৮৮৭ সালে যাত্রা শুরু করার পর মোট ৪টি উপন্যাস আর ৫৬টি ছোটগল্পে নিজের তুখোড় মেধা আর দুঃসাহসিক গোয়েন্দাগিরি দেখিয়েছেন শার্লক হোমস। কত ভাষায় যে তা অনুবাদ হয়েছে তার হিসাব নেই। আর সিনেমা? গিনেজ রেকর্ডে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সিনেমায় স্থান পাওয়া চরিত্র হচ্ছেন শার্লক হোমস! এবার বুঝুন। নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগে ৯টি সিনেমা সহ অর্ধশতাধিক ছবি নির্মিত হয়েছে শার্লক হোমসকে নিয়ে। আধুনিক কালে তাকে নিয়ে নির্মিত টেলিভিশন সিরিজ ‘শার্লক’ও দর্শকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিনিয়ত শার্লক হোমসকে বইয়ের পাতায় আর টিভি পর্দায় দেখতে দেখতে আমরা এতটাই অভ্যস্ত যে তার সাথে সাথে তার বন্ধু ওয়াটসন আর তার ভাড়া বাড়ি ২২১বি বেকার স্ট্রিটও আমাদের নিকট ধ্রুব হয়ে গেছে।
অ্যালবাস ডাম্বলডোর

বড় বড় সাদা দাঁড়ি, লম্বা সোনালী চুল, চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা, হাতে একটি অদ্ভুত কাঠি, তার চেয়ে অদ্ভুত তার কথাবার্তা, আর অদ্ভুত রকমের গাম্ভীর্য তার চাহনিতে, যা মানিয়ে যায় তার পোশাকের সাথে। এই ব্যক্তিকে আমরা সবাই চিনি, জানি এবং ভালোবাসি। আমাদের অনেকেরই শৈশব কেটেছে এই ব্যক্তির অদ্ভুত এবং বিস্ময়কর সব জাদুকরী ক্ষমতায় মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে। তিনি হলেন ‘অর্ডার অব দ্য ফিনিক্স’ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং হগওয়ার্টস জাদুবিদ্যার স্কুলের প্রধান শিক্ষক অ্যালবাস পারসিভাল উলফ্রিক ব্রায়ান ডাম্বলডোর, সংক্ষেপে যাকে অ্যালবাস ডাম্বেলডোর বলেই চিনি আমরা।
ব্রিটিশ লেখিকা জে. কে. রোলিং এর বিশ্বজোড়া পাঠক সমাদৃত উপন্যাস সিরিজ ‘হ্যারি পটার’ এর অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র অ্যালবাস ডাম্বলডোর।
ভিতো কোরলিওনে

“আমি শ্রেণীকক্ষে যা কিছু শিখেছি, পথেঘাটে তার চেয়ে অনেক বেশি শিখেছি!”- ভিতো কোরলিওনে
গালের মাংস কিছুটা ঝুলে পড়েছে বয়সের ভারে, সাদা-কালো চুলগুলো চিরুনির আঁচড়ে মসৃণ, চোখ দুটোর উপর সর্বদা রহস্যময় অন্ধকার ছায়া, সব মিলিয়ে অসম্ভব রকমের এক রাশভারী চেহারা তার। সেই সাথে গলার স্বরে ক্রমাগত প্রকাশ পায় তার গম্ভীরতা, কর্তৃত্ব আর পৌরুষ। বলছিলাম সিনেমা ইতিহাসের কিংবদন্তি চরিত্র ডন ভিতো কোরলিওনের কথা, যাকে পর্দায় যথার্থরূপে জীবন্ত করেছিলেন কিংবদন্তি অভিনেতা মারলন ব্র্যান্ডো। মার্কিন লেখক মারিও পুজোর অমর উপন্যাস ‘দ্য গডফাদার’ এর কাহিনী অবলম্বনে পরিচালক ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা তৈরি করেছিলেন ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিনেমা ‘দ্য গডফাদার’। ভিতো কোরলিওনে মূলত একজন ইতালিয়ান, যার শৈশব কাটে ইতালিতে। কোনো কারণে সেখানকার স্থানীয় মাফিয়া তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করলে তিনি সিসিলি থেকে পালিয়ে আমেরিকা চলে আসেন। সেখানে ধীরে ধীরে নিজের মাফিয়া সংঘ গড়ে তোলেন। কোরলিওনে মাফিয়া পরিণত হয় আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী মাফিয়া সংগঠনে। এর মাঝে ডন কোরলিওনে সিসিলি গিয়ে নিজের পরিবার হত্যার প্রতিশোধও নিয়ে নেন।